ইচ্ছেপাঠঃ গঙ্গা এবং সাগরের মিলনস্থান বলে গঙ্গাসাগর পুণ্যভূমি। এই ধারণা এবং বিশ্বাস থেকে গঙ্গাসাগরের তীর্থক্ষেত্রে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটে। মকর সংক্রান্তির দিন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী গঙ্গা এবং সাগরের সঙ্গমে স্নানও করেন। কিন্তু গঙ্গাসাগরের সঙ্গম গঙ্গা এবং বঙ্গোপসাগরের নয়। গঙ্গাসাগরে আসলে সাগরে মিশে যাচ্ছে হুগলি নদী, গঙ্গা নদী নয়। পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কা পার হয়ে গঙ্গা দুভাগে বিভক্ত হয়ে দুদিকে চলে যায়। বাংলাদেশের দিকে যে শাখাটি যায়, তার নাম পদ্মা। এখন পদ্মা দিয়েই গঙ্গার বেশিরভাগ জল প্রবাহিত হয়। অন্য শাখাটি ক্ষীণ, ভাগীরথী নাম নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়।নবদ্বীপের পর অজয় নদের সঙ্গে মিশে এই নদীর নাম হয় হুগলি নদী। এই হুগলি নদীই গঙ্গাসাগরের কাছে সমুদ্রে মিশেছে। আর পদ্মা নদী বাংলাদেশে ঢুকে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী যমুনার সঙ্গে মেশে। তখনও তার নাম পদ্মা। এরপর আরও কিছুদূরে বাংলাদেশের চাঁদপুরের কাছে পদ্মা মেশে মেঘনা নদীর সঙ্গে এবং নদীর নাম হয় মেঘনা। এই মেঘনা নদীই চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে সাগরে এসে মিশেছে।
প্রশ্ন জাগতে পারে গঙ্গা যদি সাগরে নাই-ই পড়ে, তাহলে গঙ্গাসাগর নাম হল কেন? বারোশ শতাব্দী পর্যন্ত পদ্মা নয়, ভাগীরথীর শাখাটিই ছিল মুখ্য এবং এই অংশ দিয়েই গঙ্গার বেশিরভাগ জল প্রবাহিত হতো। ভাগীরথী-সরস্বতী-আদিগঙ্গা চ্যানেল দিয়েই তখন গঙ্গার বিপুল জলরাশি সাগরে মিশতো। ভক্ত সমাগমে সেইসময়ই লোকের মুখে মুখে গঙ্গাসাগরের মাহাত্ম্য প্রচার হয়ে যায়। এরপর ভৌগোলিক কারণে ক্রমশ পদ্মা দিয়েই বেশির ভাগ জল প্রবাহিত হতে থাকে। সরস্বতী নদী শুকিয়ে যায়, আদিগঙ্গাও নালায় পরিণত হয়। তবে স্থানের নাম পাল্টায় নি। গঙ্গা এবং সাগরের মিলনক্ষেত্র এই বিশ্বাস নিয়েই গঙ্গাসাগরে আসেন পুণ্যার্থীরা।
শুধু সাগরে মেশা নয়, গঙ্গার উৎপত্তি নিয়েও ভ্রান্ত ধারণা চালু আছে। অনেকের ধারণা গোমুখ থেকে উৎপত্তি গঙ্গার। সেটি সত্য নয়। গোমুখ থেকে যে নদীর উৎপত্তি, তারও নাম ভাগীরথী। উত্তরাখণ্ডে দেবপ্রয়াগে ভাগীরথী মিশেছে অলকানন্দা নদীর সঙ্গে। দুই নদী একত্রে মেলার পরই তার নাম হয় গঙ্গা। অর্থাৎ উত্তরাখণ্ডের দেবপ্রয়াগ থেকে ফারাক্কার অদূরবর্তী নদী সঙ্গম -গঙ্গা নদীর বিস্তৃতি এই পর্যন্তই।