ইচ্ছেপাঠ বিংশ শতাব্দীতেও দূরের কাউকে বার্তা পাঠানোর জন্যে পায়রার কোন বিকল্প ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একাধিক নজির আছে, যখন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বার্তা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে পায়রা। ঠিক সময়ে খবর পেয়ে অনেক সৈনিকের প্রাণও রক্ষা হয়েছে তার ফলে। এক হাজার বা দেড় হাজার কিলোমিটার দূরের গন্তব্যে পৌঁছে গেছে পায়রা, এরকম অজস্র উদাহরণও রয়েছে। হোমিং পায়রা প্রতি ঘণ্টায় ৯৭ থেকে ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগে উড়তে পারে। এখন প্রশ্ন, অত দূরের রাস্তা চিনে নিয়ে কীভাবে নির্দিষ্ট ঠিকানাতেই পৌঁছয় পায়রা? কীভাবে ওরা পথ চেনে? শুধু পায়রাই বা কেন? প্রতি বছর শীতের সময় হাজার হাজার মাইল দুর থেকে উড়ে আসে পরিযায়ী পাখিরা, সেতো আমরা অনেকেই দেখেছি এবং জানি। কীভাবে এতটা দূরের পথ চিনে পরিযায়ীরা আসে এবং কীভাবেই বা আবার শীতের শেষে নিজেদের বাসায় ফিরে যায়? এই নিয়ে প্রাণী বিশেষজ্ঞদের গবেষনা এখনও চলছে। বলা হয়, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রই পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় পাখিদের। এই চৌম্বক ক্ষেত্র নির্ধারণের জন্যে ওদের শরীরে একটি বিশেষ ধরণের প্রোটিন রয়েছে। সব প্রজাতির পায়রা নয়, খবর দেওয়া নেওয়ার জন্যে ব্যবহার করা হতো হোমিং পায়রাকে। হোমিং পায়রার বিশেষত্ব হল, সারা জীবনে নিজের আস্তানা কখনও ভোলে না ওরা। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে বা অন্য কোন বিপদে না পড়লে ওরা পথ চিনে ঠিক নিজের আস্তানায় পৌঁছবেই। এই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ওদের বার্তা বাহকের কাজ করানো হত সেই প্রাচীন কাল থেকে। তবে একটা জিনিস গুলিয়ে ফেললে চলবে না। পায়রার পায়ে বার্তা আটকে যে কোন ঠিকানায় পৌঁছে যেতে বললেই কিন্তু ওরা পিওনের মত অথবা ই-মেলের মত সেই ঠিকানায় পৌঁছতে পারবে না। ওরা শুধু নিজের আস্তানাতেই ফিরতে পারে। তার মানে হুন্ডির রাজা যদি শুন্ডির রাজাকে কোন খবর পাঠাতে চায়, তাহলে তাঁকে শুন্ডির পায়রাকে দিয়েই খবর পাঠাতে হবে। হুন্ডিতে থাকে এরকম কোন পায়রা কিন্তু শুন্ডিতে খবর পৌঁছতে পারবে না। এ কারণে শুন্ডির রাজার পায়রা আগে থেকেই হুন্ডির রাজবাড়িতে থাকতে হবে। ছাড়া পেলেই ওরা নিজের আস্তানা অর্থাৎ শুন্ডিতে পৌঁছে যাবে। হোমিং পায়রার এই বিশেষত্বকে কাজে লাগিয়েই খবর দেওয়া নেওয়ার কাজ চলত, মনে করা হয় এখনও সন্ত্রাসবাদী চক্র, অসাধু ব্যবসায়ীরা পায়রাকে ডাকবাহক হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে।